ডাক্তার মমতাজ রহমান
তুমি ট্রেনে করে জার্মানিতে যাবে,জানালে আমায়-
বেশ লম্বা জার্নি কিন্তু আনন্দের।
ঠিক এক বিকেলে তুমি এসে
তোমার একটা ছবি হাতে দিয়ে বললে, যত্ন করে রেখো।
তখনো বুঝতে পারিনি তোমার বিদায়ের ঘন্টা, রাশিয়া থেকে –
আমি তোমার হাত থেকে ছবি খানি নিলাম, কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আর ততক্ষণে তুমি আমার হোস্টেল পেরিয়ে সামনে রাস্তায় এসে পড়েছো।
মুঠো ফোনে জানালে এক ঘন্টা পরেই তোমার ট্রেন ছাড়বে, আমার ক্লাস ছিল তাই আমি তোমাকে বিদায় দিতে পারিনি,
তাছাড়া আমার তেমন ইচ্ছা হচ্ছিল না, বিদায় বেলার কষ্টগুলোকে সহ্য করার ক্ষমতা কম আমার,তাই।
ডাক্তারি পড়ার ব্যস্ত জীবনে
তার উপর আবার বিদেশ বিভূঁইয়ে, কত স্বপ্নই হারিয়ে যায়,
নিজের কথাই খেয়াল থাকে না।
এক অলস বিকেলে পার্কে বসে তোমার ছবিখানির কথা মনে পড়ছিল, স্মৃতি বড় বেদনা বিধুর
জীবনকে তুমি বেছে নিয়েছো চ্যালেঞ্জ হিসেবে, তাই ডাক্তারি পড়া বাদ দিয়ে সুদূর জার্মানিতে চাকরির জন্য পাড়ি জমালে।
অনেকদিন আমাদের কথা হয়নি, একদিন তুমি হঠাৎ ফোনে জানালে , তোমার অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা, নিজেকে এবং পরিবারকে সচ্ছল রাখার জন্য
তুমি রাত দিন কারখানায় কাজ করছো,বলেছিলে- এই তো জীবনের বাস্তবতা, তোমার কষ্টের কথাগুলো শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো- নিজেকে সামলে নিয়ে তোমাকে শান্তনা দিলাম,কিন্তু যখন তুমি বললে, তোমার জীবনের স্বপ্ন তো পূরণ হলো না, তুমি আর ডাক্তার হতে পারলে না,আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম, জীবনের কত কঠোর বাস্তবতা।
তারপর থেকে আর কখনোই তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি,
মাঝে মাঝে তোমার ছবি খানির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, ক্লাসে আমাদের পড়াশোনার সুন্দর সময়গুলো মনে হতো,সকাল নেই সন্ধ্যা নেই এত তীব্র হাড় কাঁপানো শীতে বরফের ভেতরেও আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত হাজির থাকতাম।
আসলে জীবনের সীমারেখা কোথায় গিয়ে কার মিলিয়ে যায়
আমরা কেউ জানিনা, আর জানার কোন উপায় ও নেই।
তুমি আজ কোটিপতি,তোমার সব আছে জার্মানিতে- গাড়ি, বাড়ি আরো কত কি, বলেছে এক বন্ধু কিন্তু তোমার আক্ষেপ -তুমি ডাক্তার নও।
যখন জানতে পারলাম, মনটা খুব কষ্টে ভরে উঠলো, তোমার ছবি খানির দিকে অনেকক্ষণ ধরে আবারো তাকিয়ে মনে মনে বলছিলাম, যেখানেই থেকো ভালো থেকো,জীবনের সব চাওয়া- পূরণ হয়না।
২৩.০৩.২২, ঢাকা।