আরিফুল ইসলাম,বাঁশখালী চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাঁশখালীর ১৪ ইউনিয়নের ৮ ইউপি চেয়ারম্যান এখনো লাপাত্তা। তারা অফিস করছেন না, পরিষদের কাজ কর্মে পাওয়া যাচ্ছেনা তাদের। ফলে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।
এর আগে পৌর মেয়র তোফাইল বিন হোছাইনকে অপসারণ করেছে সরকার। তার স্থলে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রটকে পৌরসভার প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম ও মৃত নিবন্ধনের জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হলেও পরিষদের অন্যান্য কার্যক্রম চলছে ঢিলে তালে।
এর মধ্য, ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী, শীলকূপ ইউপি চেয়ারম্যান কায়েস ছরওয়ার সুমন, খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার, সরল ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী, কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিন, বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন ও কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা ৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা হলেন, খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার, কাথরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইবনে আমিন, কালীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত আলম, বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, সরল ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী, শীলকূপ ইউপি চেয়ারম্যান কায়েস ছরওয়ার সুমন, চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী ও ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চৌধুরী।
তাদের পাশাপাশি বহু ইউপি সদস্য এমনকি মহিলা মেম্বারও আত্মগোপনে। অনেকে মামলার আসামি হয়েছেন আবার অনেকেই মামলা হামলার ভয়ে নিরাপদ দুরত্বে আত্মগোপনে রয়েছেন। প্রকাশ্যে আসছেনা এদের কেউ। পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরও আছেন এই তালিকায়। ইতিমধ্যেই মামলার আসামি হয়েছেন, মহিলা কাউন্সিলর রুজিয়া সুলতানা রুজি, কাউন্সিলর আকতার হোসাইন, কাউন্সিলর আবদুল গফুর, কাউন্সিলর আনসুর আলীসহ বেশ কয়েকজন।
চেয়ারম্যান মেম্বার ও পৌর কাউন্সিলরদের আত্মগোপন ও অফিস না করার ফলে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে যান, তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী পুইছড়ির তারেকুর রহমান, সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন কামাল, পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন, শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলাম ফারুকী এবং বাহারছড়ার রেজাউল করিম ইউনুস নিয়মিত অফিস করছেন। তাছাড়া গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী কারাগার থেকে মুক্ত হলেও তার ইউনিয়ন গন্ডামারায় এখনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়ে গেছে।
লেয়াকত আলী গত বছর প্রথমবার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই মেম্বার ওসমান গণি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মত আত্মগোপনে সাবেক এমপি মোস্তাফিজ ও পৌরসভার অপসারিত মেয়র তোফাইল বিন হোছাইন। ইতিমধ্যেই সাবেক এমপি মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে ৬টি এবং সাবেক মেয়র তোফাইলের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের মনোনীত সাবেক এই এমপির চাচা চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ এমনকি তার মেয়ে যুব মহিলালীগ নেত্রী রওকতুন নুর প্রিয়তারও কোন হদিস নেই। সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনেরও। তারাও হয়েছেন একাধিক মামলার আসামি।
চাম্বল ইউনিয়নের মুন্সীখীল এলাকার বাসিন্দা আরাফাত সানি বলেন, চাকরির আবেদনের জন্য চেয়ারম্যান সনদ নিতে গত তিনদিন ধরে পরিষদে ঘুরঘুর করছি। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সেটি তিনি পাচ্ছি না। চেয়ারম্যান সনদ না পেলে আমার চাকরির আবেদন করা হবে না।
একই এলাকার আবদুল মজিদ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ছাড়া ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ পেতে আবেদন করতে পারছি না। এ কাজে কয়েকদিন ধরে পরিষদে ঘুরছি। প্রতিদিন যাতায়াতে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার জানান, যে সকল ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত তাদের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু ইউনিয়নে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার জানান, বিভিন্ন মামলার আসামি আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতারে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।