নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় স্বল্প আয়ের একটি পরিবারের হঠাৎ আর্থিক অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে বিস্তর আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেও নিম্নবিত্ত জীবনযাপন করা পরিবারটি এখন লাখ টাকার ঘরবাড়ি নির্মাণ, দোকানদারিত্ব এবং অন্যান্য বিনিয়োগে সম্পৃক্ত। এতে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—এই বিপুল সম্পদের উৎস কোথায়?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি দীর্ঘদিন দিনমজুরে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি তিনি প্রায় ৪০–৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগে একটি দোকান নেওয়া হয়েছে এবং পরিবারটির অন্যান্য সদস্যরা নতুন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এ ধরনের হঠাৎ আর্থিক উত্থানকে “অস্বাভাবিক” বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান,
“একজন নিম্নবিত্ত ব্যক্তি কয়েক মাসের ব্যবধানে এত বড় সম্পদ অর্জন করলেন—এর ব্যাখ্যা কি? রাষ্ট্রীয় সংস্থা কি এসব যাচাই করছে?”
স্থানীয়দের অভিযোগ, অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মনিটরিং দুর্বল। আয়কর বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছে তাদের প্রশ্ন—এ ধরনের সম্পদ বৃদ্ধির যাচাই–বাছাই কেন নিয়মিত হচ্ছে না?
সুশাসনবিষয়ক এক স্থানীয় সংগঠনের প্রতিনিধি বলেন, “এভাবে কেউ রাতারাতি লাখপতি হলে তা শুধু ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করে। দুর্নীতি, অবৈধ বাণিজ্য বা কর ফাঁকি—যাই হোক না কেন, তার উৎস অনুসন্ধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, সমাজ যদি নীরব থাকে, তবে অবৈধ অর্থপাচার, দুর্নীতি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত হয়। সততা ও নৈতিকতার জায়গা দুর্বল হয়ে পড়ে।
তারা বলেন, “অসৎ উপায়ে সম্পদ অর্জনকে যদি সমাজ সম্মান দেয়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম ভুল বার্তা পায়।”
এলাকাবাসীর দাবি, হঠাৎ সম্পদ বৃদ্ধির পেছনের উৎস রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে চিহ্নিত করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে যাবে, যা সমাজে বৈষম্য, ক্ষোভ এবং অবিশ্বাসের জন্ম দেবে।
একটি পরিবারের অস্বাভাবিক আর্থিক উত্থান শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়; এটি সমাজ, রাষ্ট্র এবং প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রও। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যদি সক্রিয় ভূমিকা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


