মোঃতানজিলুল ইসলাম লাইক, রাজশাহী,
রাজশাহীতে নভেম্বর মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস) প্রকাশিত মাসিক ডকুমেন্টেশন রিপোর্টে জানানো হয়েছে—মোট ১৬ জন নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, নির্যাতন, নিখোঁজ, আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৬ জন এবং নারী ১০ জন।
লফস জানায়, রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়। সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে নারী-শিশু উন্নয়ন ও মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করছে। তাদের মতে, অঞ্চলে নারী-শিশু নির্যাতনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। যৌতুক, পরকীয়া, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা ও সামাজিক অবক্ষয় এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
মাসজুড়ে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য ঘটনা :
দূর্গাপুরের বরিদ বাঁশাইল গ্রামে ৫ বছরের এক কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার। মতিহারের কাজলা এলাকা থেকে কিশোর পারভেজ হোসেন রেহান (১৪) দুই মাস ধরে নিখোঁজ। বাঘায় কলেজছাত্রী কারিমা খাতুন (১৭) আত্মহত্যা করেছেন। গোদাগাড়ীতে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিহত শিহাব আলী (১৭)।বাগমারায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরীর মারধরে আহত শিশু মরিয়ম (৮)।মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা। জমিজমার বিরোধে তাহেরপুরে মা ও মেয়ে নির্যাতনের শিকার। যৌতুকের টাকা না পেয়ে বাঘায় গৃহবধূ মুন্নিকে (২৬) আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।পুঠিয়ায় বিয়ের প্রলোভনে এক তরুণী ধর্ষণের শিকার।বড়গাছী ইউনিয়নে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে নিখোঁজ হালিমা খাতুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোনিয়া সুলতানার আত্মহত্যা।বাগমারায় স্ত্রী আসমানী (৩২)-কে বিষাক্ত রাসায়নিক পান করিয়ে হত্যার অভিযোগ। মহানগর দায়রা জজের স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এক যুবকের বিরুদ্ধে।সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী স্বপ্না খাতুনের কাছ থেকে প্রতারণায় ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। মাড়িয়া গ্রামে পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ৫৫ বছরের এক বিধবা নারী নির্যাতনের শিকার।
লফসের নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, “সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনাগুলোই কেবল প্রকাশ্যে আসে—অসংখ্য নির্যাতন অপ্রকাশিত থেকে যায়। নারী-শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে এবং সহিংসতার মাত্রা বাড়তেই থাকবে।”
নভেম্বর মাসে রাজশাহীতে নারী ও শিশু মিলিয়ে মোট ১৬ জন ভুক্তভোগীর ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৬ জন এবং নারী ১০ জন।
ঘটনাগুলোর ধরন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—হত্যা : মোট ৪ জন, যেখানে ২ জন শিশু এবং ২ জন নারী নিহত হয়েছেন। ১ জন নারী হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ২ জন, এর মধ্যে ১ শিশু ও ১ নারী। ধর্ষণের শিকার ২ জন, একজন শিশু এবং একজন নারী। আত্মহত্যা করেছেন ২ জন, এক শিশু/কিশোরী এবং এক নারী। নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৫ জনের, এর মধ্যে ১ শিশু এবং ৪ নারী।


