মাহবুব হাসান, ঝালকাঠি থেকে//
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার করুয়াকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মলিনা রানীর বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা অভিযুক্ত শিক্ষক মলিনা রানীর অপসরণসহ বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক মলিনা রানী স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন না। স্কুলে সরকারি বরাদ্দ করা অর্থ স্কুলের জন্য ব্যয় করে না। ছাত্র-ছাত্রী ও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন।সরকারি স্কুলের পরীক্ষা ফি না থাকলেও শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক ফি টাকা গ্রহণ করেন।
বিদ্যালয়ে না এসে হাজিরা দেয়।
১১ টায় বিদ্যালয়ে এসে ১২ টার আগেই চলে যাওয়া। স্লিপ বরাদ্দ কন্টিজেন্সির অর্থ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বরাদ্দকৃত অর্থ,বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম বাড়িতে নিয়ে যাওয়া,বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বই বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ সহ ২৪ টি অভিযোগ এনে এলাকাবাসী নলছিটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ শিক্ষা দপ্তরদের উদ্ধাতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিযোগ করে বলেন, আমার নাতি ওই স্কুলে পড়াশোনা করেন তার কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার ফি বাবদ ৪০ টাকা গ্রহণ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মতিউর রহমান, জানান, প্রধান শিক্ষক স্কুলে নিয়মিত না এসে বেতন-ভাতা তুলছেন এবং স্কুলের পুরাতন বই ফ্যান, রেজুলেশন ছাড়াই বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষক মলিনা রানী এর আগেও উপজেলার দুটি স্কুলের চাকরি করাকালীন সময়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে শাস্তি মূলক বদলি করা হলেও থামছে না তার দুর্নীতি অনিয়ম! স্থানীয়দের দাবি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর আমলে তার এপিএস ফখরুল মজিদ কিরণ ও বরিশালের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দারের ক্ষমতার দাপটে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহাউৎসবে মেতে ছিল মলিনা রানী।এ সময় তাকে কেউ কিছু বলতে পারতো না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনকি কয়েকজন উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (এটিও) তারাও লাঞ্ছিত হয়েছেন মলিনা রানীর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন বর্তমানে মলিনা রানীর খুঁটির জোর কোথায়? তারা আরো বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতি করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াসহ তাকে এই স্কুল থেকে অপসারণ করতে হবে। ওই ইস্কুলের সহকারী পাঁচজন শিক্ষক সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন সময়ে, আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনে। স্কুলে বসে আমাদের নামাজ আদায় করতে দেয়া হয় না। এমনকি নামাজের স্থানের পর্দা ও ছিড়ে ফেলে মলিনা রানী। তার কথা না শুনলে সহকারী শিক্ষকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সরকারি শিক্ষকরা। তাদের দাবি মলিনা রানীকে বদলি না করা হলে আমাদেরকে অন্যত্র বদলি করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মলিনা রানী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি আমার উদ্ধতন কতৃপক্ষের অনুমতিক্রমে স্কুলের পুকুরসহ অন্যান্য স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে গেলে স্থানীয় জমিদাতা ও কয়েকজন স্বার্থন্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, আমি ৩-৪ জন ছাত্র ছাত্রীর কাছ থেকে ফি নিয়েছিলাম। আজকের আবার ফেরত দিয়েছি।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরিন আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


