মোঃতানজিলুল ইসলাম লাইক, রাজশাহী,
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগম
আদালত অবমাননাসহ নিয়ম-নীতি অমান্যের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগমের বিরুদ্ধে। আওয়ামীপন্থি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে নতুন করে রাকাবে আওয়ামীপন্থিদের পুনর্বাসনের অভিযোগ। জুলাই আন্দোলনে বাধা প্রদান এবং ছাত্র-জনতা হত্যায় সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অপসারণ ও শাস্তি চেয়ে উচ্চ আদালতে রিটও হয়েছে। ফলে বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকে নিয়ে বেকায়দায় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ।
জানা গেছে, পদোন্নতি পেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াহিদা বেগম রাকাবে বদলি হয়ে আসেন। তার আগে তিনি অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিতে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ ছিল। এনিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয়। কিন্তু আওয়ামী ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আদলতকে বুড়ো আঙুল দেখান। এই ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি ওয়াহিদা বেগমসহ অগ্রণী ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তাকে আদালত আদেশ অমান্য করার দায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে কৌশলে রাকাবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন ওয়াহিদা বেগম।
রাকাবে তার এই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। এ নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে পরে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। আদালতের নির্দেশে জানানো হয়, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক জারি করা বিতর্কিত নিয়োগ পত্র নং ৫৩.০০.০০০০.৩১২.১২.০০৪.২০-৯২ তারিখ: ২৭.০২.২০২৫ এর মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ওয়াহিদা বেগমকে নিয়োগ প্রদান করা হয় যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখের সার্কুলার নং-০৫ ব্যাংক-কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ/নিযুক্তি এবং তার দায়-দায়িত্ব সম্পর্কিত নীতিমালার শর্তাবলি অনুসরণ না করে করা হয়েছে, তা আইনগত ক্ষমতা ছাড়া করা বলে ঘোষণা করা না হওয়ার কারণ ৩ সপ্তাহের মধ্যে দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’
এর আগে গত ২২ অক্টোবর রাকাবের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর এমডির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে এমডির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে এমডিকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত অপসারণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ওয়াহিদা বেগমের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায়। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের সাবেক ম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার। অগ্রণী ব্যাংকে দায়িত্বপালনকালে তিনি সেখানকার বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন। আরও আগে রুপালি ব্যাংকে দায়িত্বপালনকালে সেখানকার বঙ্গবন্ধু পরিষদেরও উপদেষ্টা ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে- জুলাই আন্দোলন দমনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সেই সময়কার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মোটা অঙ্কের অর্থ যোগান দেন ওয়াহিদা বেগম।
আরও অভিযোগ রয়েছে, রাকাবে যোগদানের পর তিনি ব্যাংকের আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করছেন। রাকাবে তার নির্দেশে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসর কর্তৃক ৩৬শে জুলাই বীর শহীদদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে পদদলিত করে শহীদদের প্রতি অবমাননা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিএনপি মহানগর কর্তৃক প্রতিবাদ সভা হয়। বিএনপি মহানগর কর্তৃক ব্যাংক ব্যবস্থাপনা বরাবর স্মারকলিপি দাখিলের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবি জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
আরও অভিযোগ রয়েছে, এমডি রাকাবে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি সংগঠিত করছেন। ব্যাংকের ভেতর নিজ মতাদর্শের দলীয়করণ, সুবিধাজনক স্থানে পছন্দমতো পদায়ন, মতবিরোধীদের যত্রতত্র নির্বাসন এবং প্রশাসনিক ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে ভীতিকর কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। ফলে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
আওয়ামী তোষণ করে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়া ওয়াহিদা বেগমের বিরুদ্ধে রয়েছে অদক্ষতা এবং ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগও। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদা বেগম অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় ঘুষ দিয়ে পদোন্নতি এবং বদলি বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এক প্রমোশনে তিনি ৪০ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে করপোরেট গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ অনুমোদন, সিন্ডিকেট চালানো এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ ও প্রমোশন বাণিজ্য চালানোর অভিযোগও রয়েছে। তার আর্থিক লেনদেনের চেকের ফটোকপি, বিকাশ/নগদ লেনদেন রেকর্ড, এমনকি অডিও ক্লিপ, যা থেকে স্পষ্ট হয় ঘুষের বিনিময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে দুদকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও দলীয় প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে গেছেন।
আরও অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদা বেগম মাত্র ছয় মাস রুপালি ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে অদক্ষতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে অগ্রণী ব্যাংকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে নিয়োগে নিয়ে চমক সৃষ্টি করেন। পূর্বের কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী স্বৈরাচারের বিশেষ একটি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি এই উচ্চপদে পৌঁছে যান।
অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওয়াহিদা বেগমের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আওয়ামী রাজনৈতিক প্রভাব এবং লবিংয়ের মাধ্যমে তিনি একের পর এক পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগদানের পর থেকে ব্যাংকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করে সিন্ডিকেট ও বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন।
তার এই নিয়োগ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে হয়েছে। নীতিমা


