মোঃ ইয়াছিন আকাশ, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি//
ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষার আড়ালে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন ব্যাংকটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তারা পরীক্ষাটি বয়কটের ঘোষণা দেন। দেশের বিভিন্ন শাখা থেকে চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা সেখানে জড়ো হন। তাদের হাতে ছিল নানা ব্যানার ও স্লোগান— “পরীক্ষা দেব তখনই, সবাই বসবে যখনই”, “একবার দিলাম পরীক্ষা, দুইবার দিতে রাজি না”, “হাইকোর্ট অবমাননা কেন, জবাব চাই” ইত্যাদি।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তাদের এই পরীক্ষায় বসতে বলা হয়েছে। অথচ ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পরীক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে তারা বিষয়টিকে আঞ্চলিক বৈষম্য ও ছাঁটাইয়ের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
সমাবেশে বক্তারা জানান, আদালত আগেই নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা অমান্য করে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২২ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ঘোষণা করে এবং ২৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে নোটিশ জারি করে। নোটিশে বলা হয়, পরীক্ষায় অনুপস্থিতদের চাকরি ঝুঁকিতে পড়বে।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা এস এম এমদাদ হোসাইন বলেন, “এটি কোনো দক্ষতা যাচাই নয়, বরং চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের ছাঁটাইয়ের প্রহসন মাত্র।” অপর কর্মকর্তা এসকান্দর সুজন বলেন, “৭-৮ বছর ধরে যারা কর্মরত আছেন, হঠাৎ তাদের বাদ দিলে পরিবারগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।”
প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের কাছে আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি দেন। তিনি বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে তোলার আশ্বাস দেন।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, তারা সরকারি নিয়ম মেনে যোগদান করেছেন এবং পূর্বে একাধিক পরীক্ষা ও পদোন্নতিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাই বৈষম্যমূলক এই পরীক্ষায় তারা বসবেন না। তাদের দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ছাঁটাইয়ের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা অবিলম্বে দূর করতে হবে।
কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দেন, দাবি পূরণে দেরি হলে তারা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন। তাদের ভাষায়, “চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। চাইলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা পুরো ব্যাংকিং কার্যক্রম অচল করে দিতে পারব।”
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। হাজারো কর্মকর্তা আতঙ্কে রয়েছেন, পরীক্ষার অজুহাতে চাকরি হারাতে হবে কিনা তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।


