সিরাজুল ইসলাম: কক্সবাজার
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ফকিরজুম পাড়া ও আঁধার ঘোনায় বহুদিন ধরে গোপনে গড়ে উঠেছিল অবৈধ অ-স্ত্র তৈরির কারখানা। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে র্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল অ-স্ত্র উ-দ্ধার এবং একাধিক ভ্রাম্যমাণ কারখানা ধ্বং-স করেছে।
শতাধিক র্যাব সদস্য ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযানে অংশ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের গহীনে অভিযানের সময় বি-স্ফোরণের মতো শব্দ শোনা গেছে। তবে অভিযানের কারণে অভিযুক্ত অ-স্ত্র কারিগর ও স-ন্ত্রাসীদের বড় অংশ পাহাড়ের অন্য প্রান্তে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
র্যাব-৭ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ক্যাম্পের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে বেশ কিছু অ-স্ত্র উদ্ধার এবং কয়েকজনকে আ-টক করা হয়েছে। র্যাব সূত্র জানিয়েছে, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে না।
স্থানীয়দের দাবি, চারদিক সাগরবেষ্টিত হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয় ভেবে দীর্ঘদিন ধরে স-ন্ত্রাসী গোষ্ঠী এসব এলাকায় অ-স্ত্র কারখানা চালিয়ে আসছিল। একদিকে অভিযান শুরু হলে অপর প্রান্তে পালানোর সুযোগ থাকায় পুরো এলাকাজুড়ে চিরুনি অভিযান ছাড়া এ নেটওয়ার্ক ধ্বং-স করা কঠিন হবে
জুলাই অভ্যুত্থানে নি-হত শ-হীদ তানভীর ছিদ্দিকির বড় ভাই মিজানুর রহমান মাতাব্বর জানান, “আমার ভাই তানভীর ও চাচা তোফায়েল হত্যার পেছনে যে গ-ডফাদার চক্র—তারেক, নোমান, লম্বা তারেক ও কালাবদার—তারা দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি টংঘরে বসে এসব অ-স্ত্রের কারখানা চালাতো। আজ র্যাবের অভিযান তাদের মূল আস্তানায় হয়েছে।
অভিযানকে ঘিরে পুরো মহেশখালী দ্বীপজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, ধারাবাহিক অভিযান চালানো হলে মহেশখালী থেকে অবৈধ অ-স্ত্র কারখানা ও স-ন্ত্রাসী আ-স্তানা চিরতরে উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে।
মহেশখালীতে বারবার স-ন্ত্রাস ও অ-স্ত্র কারখানার খবর পাওয়া গেলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। পাহাড়ের ভৌগোলিক দুর্লভতা, স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা—সব মিলিয়ে এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এবার র্যাব-পুলিশের অভিযানকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠছে—
এ ধরনের অ-স্ত্র কারখানার পেছনে মূল অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষক কারা?
শুধু অভিযান দিয়ে কি এ নেটওয়ার্ক ধ্বং-স করা সম্ভব, নাকি দরকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্ত অবস্থান?
দ্বীপের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা কাজে লাগিয়ে যে চক্র দীর্ঘদিন ধরে স-ন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কি টেকসই কৌশল নেওয়া হবে?
মহেশখালীর দুর্গম পাহাড়ে অভিযানের সাফল্য নিঃসন্দেহে একটি বড় অগ্রগতি। তবে পুরো দ্বীপকে স-ন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে এ ধরনের বিশেষ অভিযানকে নিয়মিত ও বিস্তৃত করতে হবে। সেইসাথে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদন্ত ও স্থানীয়দের সহযোগিতা ছাড়া পাহাড়ি জনপদে লুকানো অ-স্ত্র কারখানা নির্মূল হবে না।


