এম কে হাসান, জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন নীরব, প্রায় স্থবির।
সাগরের ঢেউ আগের মতোই আছড়ে পড়ে, কিন্তু মানুষের মুখে নেই সেই হাসি, নেই সেই কোলাহল। পর্যটক আসা বন্ধ, মাছ ধরা বন্ধ, দোকানপাট বন্ধ, আর নৌযানও চলছে না স্বাভাবিক গতিতে।
জীবিকা হারিয়ে দিশেহারা প্রায় ১০ হাজার দ্বীপবাসী এখন ভয় ও অনিশ্চয়তার মাঝে দিন কাটাচ্ছেন।
ভয় আর অনিশ্চয়তার দ্বীপ:- মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মি’র সংঘর্ষ তীব্র হওয়ায় সীমান্তসংলগ্ন সাগর ও নাফ নদীর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা জনিত আশঙ্কায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচল প্রায় বন্ধ। জেলেদেরও সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আমরা সাগরের মানুষ। সাগরে যেতে না পারলে বাঁচব কেমন করে?- সেন্টমার্টিনের জেলে আবদুল খালেক এর
চলাচল প্রায় বন্ধ:-টেকনাফ থেকে নিয়মিত নৌযান না চলায় দ্বীপ এখন প্রায় বিচ্ছিন্ন। রোগী নেওয়া, ওষুধ আনা বা পণ্য পরিবহন-সবই এখন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয় সাপেক্ষ। নুরুল ইসলাম নামের দ্বীপের এক বাসিন্দা, বলেন-রোগী হলে নৌকা পেতে দেরি হয়, সাগরও ভয়ংকর। কিন্তু করব কী, চিকিৎসাও তো লাগবে, ওষুধও আনতে হয়।
পর্যটন ব্যবসায় ধস:- অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টি সেন্টমার্টিনে পর্যটনের মৌসুম। প্রতি বছর এ সময় হাজারো পর্যটকে মুখর থাকে দ্বীপ। কিন্তু এবার মৌসুম শুরু হবার আগেই নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সবকিছু থেমে গেছে। হোটেলকর্মী রুহুল আমিন (২৮) বলেন:- এই সময়টায় একটু আয় হয়, তা দিয়েই বাকি সময় টিকে থাকি। এখন হোটেল বন্ধ, মালিকও চলে গেছেন।
দ্বীপের প্রায় ৭০টির মতো ছোট-বড় রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও দোকান এখন বন্ধ। অনেকেই কাজের খোঁজে মূল ভূখণ্ডে চলে গেছেন।
দ্রব্যমূল্যের আগুন:- যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দ্বীপে দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে পানির বোতল পর্যন্ত দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দোকানদার শামসুল আলম বলেন:- টেকনাফ থেকে মাল আনতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিক্রি না থাকায় দোকানও টিকছে না।
দ্বীপবাসীর আর্তি:- কাজ নেই, আয় নেই, খাদ্য সংকট-সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেন্টমার্টিনবাসী। রহিমা খাতুন নামে স্থানীয় এক নারী উদ্যোক্তা বলেন:-
ট্যুরিস্ট এলে আমরা হস্তশিল্প বিক্রি করতাম। এখন ঘরে বসে আছি, টাকাও শেষ।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও নিরাপদ নৌযান চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
আশার আলো:- সব দুর্ভোগের মাঝেও আশা ছাড়েননি দ্বীপের মানুষ। সাগরের ঢেউয়ের মতোই তাদের বুকেও চলছে বেঁচে থাকার জেদ। তারা চান, আবার যেন তীরে ভিড়ে নৌকা, ফিরে আসে পর্যটক, আর সেন্টমার্টিন ফিরে পাক আগের প্রাণচাঞ্চল্য ও জীবনের রঙ।