সিপাউর রহমান চৌ: কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।
কুলাউড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম জয়পাশা। দীর্ঘকাল থেকে নানা ঐতিহ্য ও খ্যাতি রয়েছে এই গ্রামের। তারই ধারাবাহিকতায় এবার জয়পাশা গ্রামের সম্মান আরো বৃদ্ধি করলেন ৪৫তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত দুই মেধাবী। পুলিশ ক্যাডারে শাহরিয়ার শামসুল ও পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে শাহনাজ সুলতানা সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় নিজেদের পরিবারের পাশাপাশি জয়পাশা গ্রাম জুড়ে বইছে ৪৫তম বিসিএস জয়ের আনন্দ। কুলাউড়ার এই দুই মেধাবীর সফলতা অর্জনে শুভাকাঙ্খীসহ গ্রামবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশের বার্তা প্রকাশ করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ৪৫তম বিসিএসে কুলাউড়ার দুই মেধাবীর স্বপ্ন পূরণে গর্বিত পুরো উপজেলা। তারা হচ্ছেন:
শাহরিয়ার শামসুল- কুলাউড়া উপজেলার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের জয়পাশার গ্রামের বাসিন্দা মো: শহীদুল্লাহ ও নূর মহল বেগম দম্পতির পুত্র শাহরিয়ার শামসুল সদ্য ঘোষিত ৪৫তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে (সহকারী পুলিশ সুপার) হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। মনুসর মোহাম্মদিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলীম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ’তে প্রথম বিভাগে কৃতীত্বের সহিত সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। দিয়েছেন অনেক চাকুরি পরীক্ষা। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকলেও বিসিএস জয়ের স্বপ্নে পড়াশোনা ও চেষ্টা বাদ দেননি পেশাগত জীবনের চাপেও। অবশেষে বহুল প্রচেষ্টার ও পরিশ্রমের পর ৪৫তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে স্বপ্ন পূরণ হলো শাহরিয়ার শামসুলের। বিবাহিক জীবনে স্ত্রী ছাড়াও ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।
বিসিএসের এই ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় শাহরিয়ার শামসুল জানান, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হবো। কর্মজীবনে সততা ও আদর্শের সাথে দেশ ও মানুষের কল্যাণ কাজ করতে পারি এই জন্য সকলের দোয়া চাই। পিতা-মাতা, স্ত্রী, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকদের অবদান ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর এই সফলতা অর্জনে।
শাহনাজ সুলতানা- কুলাউড়া পৌরসভার জয়পাশা গ্রামের প্রয়াত ব্যবসায়ী মো: ফজলুল হক ও গৃহিণী রানুয়ারা বেগম দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যা শাহনাজ সুলতানা প্রাথমিক শিক্ষা জীবন থেকেই মেধাবী। তিনি কুলাউড়া বলিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে বিবিএ ও এমসবিএ’তে তিনি প্রথম বিভাগ এ কৃর্তীতের সাথে উচ্চ শিক্ষা শেষ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করলেও প্রতিনিয়তই পড়াশোনা ও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন স্বপ্নের বিসিএস পরীক্ষায় সফলতার জন্য। সেই স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে পুরণ হলো সদ্য ঘোষিত ৪৫ তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে। পিতা না থাকলেও মা ও ভাই-বোনের অনুপ্রেরণা এ ফলাফলে উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা রেখেছে তাঁর। শাহনাজ সুলতানা বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ছাড়াও তাঁর পরিবারে মেধার বিকাশ ঘটিয়েছেন ভাই-বোনও। বড় ভাই রেজাউল করিম জনতা ব্যাংকের অফিসার ও ছোট বোন জিনাত রেহানা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। এছাড়াও স্বামী গিয়াস উদ্দিন বাবু রূপালী ব্যাংকে কর্মরত।
বিসিএসের তাঁর এই সাফল্য ও অবদানের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, মহান সৃষ্ঠিকর্তার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। আমার এই সাফল্যের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন প্রয়াত বাবা। বাবার মৃত্যর পর পরিবারের সার্বিক পরিচালনার মূল অবদান মায়ের। মায়ের অবদান ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমার ভাই-বোন, স্বামী, মামা-মামী, চাচা-চাচীসহ সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব শুভাকাঙ্খীরা আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আমার ১১ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘ ৬ বছর যাবত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকার কারনে শিশুদের পড়াতে ও মিষ্টি মধুর সময় কাটাতে আমার বেশ ভালো লাগে। তবুও মনের গভীরে একটা ইচ্ছা ছিলো আমি যেন বিসিএস ক্যাডার হতে পারি। মহান আল্লাহ অবশেষে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। যার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানো যাবে না। সকলের দোয়া প্রত্যাশা করে কর্মজীবনে যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশ ও মানুষের সেবা করতে পারি।
এদিকে জয়পাশা গ্রামের বাসিন্দা কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, কুলাউড়া উপজেলার জয়পাশা একটি আদর্শ গ্রাম। এ গ্রামের অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। ৪৫তম ঘোষিত বিসিএস এর ফলাফলে কুলাউড়া উপজেলা থেকে এবার পুলিশ ক্যাডারে শাহরিয়ার শামসুল ও পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে শাহনাজ সুলতানা সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের এই কৃর্তীতের জন্য শুভকামনা জানাই। কর্মজীবনে দেশের কল্যাণে যাতে নিয়োজিত থাকেন এই প্রত্যাশা করি।


