জহিরুল ইসলাম সুমন চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা :
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আদালতের রায়ের আলোকে পরিবেশ অধিদপ্তরের গুড়িয়ে দেয়া বিতর্কিত ইটভাটা “মা ব্রিকস” পুণরায় চালু করেছে মালিকপক্ষ। ইতোমধ্যেই ভাটায় নতুন ইট পোড়ানো কার্যক্রমও শুরু করেছে। এর আগে আদালতের রায় উপেক্ষা করে ইটভাটাটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে ব্যাপক তোলপাড় এবং আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। আদালতের রায় ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন ব্রয়লার চুল্লী নির্মাণ করে উৎপাদনে যাওয়ায় জনমতে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জানিয়েছে এমন পরিস্থিতিতে ইটভাটাটি চালু করার খবর পেয়ে আমরা ইটভাটা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করেছি। তবে ইটভাটার মালিক খোরশেদ আলম ভাটা চালুর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে দাবী করেন, রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে করা হয়েছে রিট। রিট এর কপি দেয়া হয়েছে প্রশাসনের সব টেবিলে। তবে রিট করার পর ইটভাটা চালু করার অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি তারা।
এদিকে আদালতের রায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের তোয়াক্কা না করে ইটভাটা চালুর পক্ষে স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মী ও ইটভাটার শ্রমিকদের নিয়ে একটি মানববন্ধন করেছে খোরশেদ আলম।
জানা যায়, উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর মৌজায় বাজার সংলগ্ন “মা ব্রিকস” ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসন যৌথ উদ্যোগে লাইসেন্স না থাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক বসত, ও বাজার সংলগ্ন নিষিদ্ধ এলাকায় অবস্থিত “মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ” নামক ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয় এবং ইটভাটার মালিক কাশিনগর ইউনিয়ন আওয়ামীগের সহ-সভাপতি মোঃ খোরশেদ আলমকে নগদ এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে। গুড়িয়ে দেয়ার পর এটি বন্ধ ছিল দীর্ঘ ১১ মাস।
এরপরও নতুন ব্রয়লার চুল্লী নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের তিনটি দপ্তর -পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমিনের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা। এর পাশেই মণিকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবতেদায়ি মাদ্রাসা, এতিমখানা, জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারি স্বাস্থ্য ক্লিনিকসহ আবাসিক ঘরবাড়ি ইটভাটার ঝুঁকিতে রয়েছে।
কাশিনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, ইটভাটার আশেপাশে ফলপাকড়া ধরেনা এটা সত্য। ধূলাবালিতে ক্ষতি হচ্ছে সবার।
ইটভাটা লাগোয়া বাড়ির শহীদ ও ছালামত উল্লাহর পরিবারের সদস্যরা জানান, শুষ্ক আমাদের বাড়ি ও বাড়ির গাছ গাছালি ধূলাবালিতে লাল বর্ণ ধারণ করে। ধূসর হয়ে বাতাস। শ্বাসকষ্ট জনিত নানা রোগব্যাধি আমাদের লেগেই থাকে।
মা ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী মোঃ খোরশেদ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। কোর্ট ইটভাটা পূণরায় চালুর অনুমতি দিয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি দপ্তরে দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘গতবছর বিজ্ঞ আদালতের আদেশের আলোকে ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। সম্প্রতি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মা ইটভাটার কর্তৃপক্ষ একটি রিট করেছেন কিন্তু এটার কোন নিষ্পত্তি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আদালতের রায় ব্যতিত কোনভাবেই ইটভাটা চালানোর সুযোগ নেই। ইটভাটাটির পরিবেশ ছাড়পত্র এবং ডিসি অফিসের কোন অনুমোদনও নেই। এমন পরিস্থিতিতে ইটভাটাটি চালু করার খবর পেয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করেছি।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, আদালতের রায়ের আলোকে গতবছর ইটভাটাটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। মহামান্য হাইকোর্টে রিটের আদেশ মোতাবেক আবারো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে আইন সৃষ্ট ডেডিকেটেড ডিপার্টমেন্ট হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা অফিস এক্ষত্রে অধিকতর ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা কামনা করলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।


