মো:ফারুক আহমেদ( ঘাটাইল)
রবিউল আলম বাদল ঘাটাইল টাঙ্গাইল থেকে
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন ঝড়কা, বটতলী ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী ৪টি বন বিটে বনের জমিতে দোকান ঘর, বসত বাড়ি ও দালান নির্মাণের হিড়িক পরেছে। তারা বিট কর্মকর্তা ও রেঞ্জ অফিস কে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব দালান নির্মাণ করছে। ফলে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে বন,অপর দিকে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরছে।
অফিস সুত্রে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের আওতাধীন ৬টি বিট অফিসের অধীনে মোট ২৫ হাজার ৭১৯,২০ একর বনভুমি রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৭শত একরের অধিক বনভূমি ইতিমধ্যে দখল হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যে জমি আছে সেই জমিতে বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান স্হাপন করার কথা। কিন্তু সরজমিন গিয়ে দেখা যায় অফিসের কাগজের হিসাবের সাথে বাস্তবতার কোন মিল পাওয়া যায় নাই । একমাত্র দেওপাড়া ও ঝড়কা বিট অফিসের আওতাধীন কিছু বাগান থাকলেও অন্য সব বিট অফিসের আওতায় বাগান নাই বললেই চলে। তার মধ্যে সাগরদিঘী ও ধলাপাড়া সদর বিট অফিস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে। যেখানে কিছু কিছু অংশে ২/৪টি বাগান ছাড়া অবশিষ্ট সবটুকুই বেদখল হয়ে গেছে। শুধু গাছের পরিবর্তে চারিদিকে গড়ে উঠেছে কলা বাগান, হলুদের বাগান, পেঁপে বাগান, আমের বাগান ও মিল কারখানা, বসত বাড়ি ও পোলট্রি ফার্ম ও পাকা দালান।
স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা রক্ষকরাই ভক্ষন করে থাকে , তাদের দাবি বনের জমি আর জোর করে দখল করতে হয়না। রেঞ্জ অফিস বিট অফিসে টাকা দিলেই মিলে জমি। বিশস্হ্য সুত্রে জানা যায় বনের জমিতে নতুন বাড়ি নির্মাণ করলে অফিসকে দিতে হয় কমপক্ষে ১ লাখ টাকা, টিনের ঘর নির্মাণ করলে ৫০ হাজার, হাফ দালান নির্মাণ করলে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং সিসি পিলার দিয়ে ছাদ ঢালাই করলে দিতে হয় দেড় থেকে ২ লাখ টাকায় রফাদফা হয়ে থাকে। তবে এ ভাবেই বন রক্ষকদের যোগসাজশেই বনের এসব জমি দখল হয়ে যাচ্ছে।
১৮ অক্টোবর ঝড়কা বন বিটের আওতাধীন সন্ধানপুর মৌজার নয়ন চালা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বনের ৩৭৫১ দাগে মৃত সাবদুলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বনের জমি দখল করে বিশাল বাড়ি সাজিয়েছে। সেই বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একাধিক লেয়ার ফার্ম। পাশেই বিশাল আকারের পাকা দালান নির্মাণ করছেন।
পাশেই নয়ন চালা গ্রামের সেকান্দর আলীর ছেলে হোসেন আলী বনের জমিতে ফাউন্ডেশন দিয়ে পাকা দালান নির্মাণ করছেন।
বনের জমিতে কি ভাবে পাকা দালান নির্মাণ করছেন জানতে চাইলে হোসেন আলী জানান এবিষয়ে আমার কোন কথা নাই বলে দ্রুত স্হান ত্যাগ করেন।
বনের জমিতে কি ভাবে পাকা দালান নির্মাণ করছেন মুঠো ফোনে জানতে চাইলে নয়ন চালা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ছেলে হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে কথা বলতে
এসব বিষয়ে ঝড়কা বিট অফিসের বিট কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন জবর দখলকারী হেলান উদ্দিন বনের ২ একর জমি দখল করে বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতাদের সহযোগিতায় দালান নির্মাণ করেছে। এখানে আমার করার কিছুই ছিলো না।
গত ২০ অক্টোবর সাগরদিঘী বন বিটের আওতাধীন পাগারিয়া আমতলা তে- মোড় গিয়ে দেখা যায় গত কয়েক মাসে সেখানে বন বিভাগের জমিতে পাশাপাশি ৪টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তার পাশেই বনের জমিতে পাগারিয়া বনিক সমিতির নামে লোহার ফ্রেম বসিয়ে বিশাল আকারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
এবিষয়ে সমিতির কাউকে না পেয়ে নির্মাণ শ্রমিক এক যুবক জানান, বনের জমি কিনা আমরা জানিনা তবে বনিক সমিতি এঘর নির্মাণ করছে।
একইদিন সাগরদিঘী বন বিটের আওতাধীন বিমানপরা এলাকার বড় চুলাবর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ঐ গ্রামের মৃত আঃ জলিলের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির হোসেন বনের জমিতে স্হায়ী পাকা দালান নির্মাণ করছে। এ বিষয়ে প্রবাসী মনির হোসেন বনের জমি স্বীকার করে বলেন, সাগরদিঘী বিট কর্মকর্তাকে জানিয়েই ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
একই গ্রামের বিদেশ ফেরত সোহরাব আলী বনের জমিতে জমকালো ডিজাইনে সদ্য স্হায়ী পাকা দালান নির্মাণ করে বসবাস করছে।
এ বিষয়ে সোহরাব আলীকে না পেয়ে তার পাশের বাড়ির চাচা মৃত চান মাহমুদ এর ছেলে সোনালী মিয়া (৫৫) নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আশে পাশে যা দেখতেছেন সবই বনের জমি। এসব বাড়ি ঘর সবগুলোই বনের জমিতেই নির্মাণ করা হয়েছে।
বনের জমি দখল করে কি ভাবে পাকা দালান নির্মাণ করা হচ্ছে সাগরদিঘী বন বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আনচারীর নিকট জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনে না জানার ভ্যান করে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ কেটে দেন।
বনের জমিতে কি ভাবে পাকা দালান ও বসত বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে জানতে চাইলে ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাব্বির হোসেন বলেন এসব ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করতে লিখিত প্রস্তাবের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ডিসি মহোদয় কে দেওয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশনার দিনক্ষন পেলেই উচ্ছেদ পরিচালনা করা হবে।


