ঢাকাThursday , 29 August 2024
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি বার্তা
  5. খেলাধুলা
  6. গনমাধ্যাম
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. ধর্ম
  11. প্রবাসের খবর
  12. ফ্যাশন
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর
  • গোমতী নদী-

    admin
    August 29, 2024 3:49 pm
    Link Copied!

    গোলাম রাব্বানী শিমুল:

    কোন এক শীতের ভোর। ফজরের নামাজ শেষে আম্মা-আব্বার সঙ্গে গোমতী পাড়ি দিচ্ছি। শুনশান নদী। নদীর বুক থেকে ভেসে উঠা কুয়াশারা সাদা পাখির মতো উড়ে যায়। কয়েক হাত দূরেই কুয়াশার চাদর। সেই চাদর পেরোলেই যেন স্বর্গে যাওয়া যায়। আব্বা নৌকার গুন টানছেন। সন্তানের মঙ্গল কামনায় আমার শরীর ছোঁয়ানো একটি পয়সা নদীতে ছুঁড়ে দেন আম্মা। গোমতীর স্রোত ভেঙ্গে তিরতিরিয়ে এগিয়ে যাই আমরা।

    গোমতীর সঙ্গে এটাই হয়েতো আমার সবচেয়ে বয়সী স্মৃতি। গোমতী শব্দটা শুনলেই আমার স্মৃতিতে এই স্বর্গীয় দৃশ্য ভেসে উঠে। ভাববার চেষ্টা করি, কতো শত বছর ধরে গোমতীর স্রোত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের। গড়ে তোলছে আমাদের সভ্যতা।

    গত কয়েকদিন ধরে বন্যার কল্যানে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসা গোমতী নদী আমাদের ভাষায় ‘গাঙ’। গোমতীর বাধ হলো ‘গাঙের আইল।’

    গোমতী আমার বাঁকে বাঁকে চলা ছোট নদী। আমার পরমাত্মীয়। মা, বোন, বন্ধু। গোমতীর গন্ধ আমার মায়ের গন্ধ।

    বন্ধুর সঙ্গে জাল পেতে মাছ ধরা, দলবেঁধে গোসল করতে গিয়ে ডুব সাঁতারে দিন পার করে দেয়া। বাজি ধরে সাঁতরে নদী পারাপার। কিংবা চৈত্র সংক্রান্তিতে বিষুর জন্য নদী চরের জমি থেকে দলবেধে সব্জি সংগ্রহ। আমার শৈশব কৈশোরের জীবন মানেই গোমতী।

    আমি যখন পড়ি ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে’ আমার চোখে তখন গোমতীর মুখ ভেসে উঠে।

    যখন পড়ি, এই যে নদী/ নদীর জোয়ার/নৌকা সারে সারে/একলা বসে আপন মনে/ বসে নদীর ধারে, এই ছবিটি চেনা/ মনের মধ্যে যখন খুশি/এই ছবিটি আঁকি।

    তখন আমি গুনটানা সেই নৌকা ঘাটের পাশের লালরঙা মান্দার গাছের শেকড়টার কথা ভাবি। আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে যে শেকড়ে বসে।

    একদিন বাবা মায়ের ইচ্ছে হলো ছেলে পড়াশোনা করে বড় কিছু হবে। গোমতীর মায়া ছাড়তে হলো। ঠাই হলো শীতলক্ষ্যার পাড়ে। ইটপাথরের শহরে আমার স্বপ্ন বন্দী হলো ঠিকই, মন পড়ে রইলো গোমতীর জল কাদায়।

    তারপর হঠাৎ একদিন দেখলাম নদীর স্রোতের সঙ্গে অজস্র বেলা গড়িয়ে গেছে। আমার মনে আঁকা গোমতীর চেনা ছবি পাল্টে গেছে শৈশবে গ্রামে ফেলে আসা বন্ধুর মুখের মতো। আমি আৎকে উঠলাম। হায় এই আমার নদী!

    উজানে ভারতের দেয়া বাঁধের ফলে নদীজুড়ে চর জেগেছে। শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে মরছে নদী। সেঁচের জলটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। নতজানু বাংলাদেশ সরকার অন্য নদীগুলোর উপর দেয়া ভারতের বাঁধের মতো এই বাঁধ নিয়েও কোন কথা বলেনি। এমনকি নদীর নাব্যতা রক্ষায় নদী খনন হয়েছে বলেও আমরা শুনিনি। উল্টো রাজনৈতিক ক্ষমতাধরেরা দখলের উৎসবে মজেছে।

    নদীর বুকে ছোট ছোট অজস্র চর। জলহীন, স্রোতহীন গোমতীর দেহ শীর্ণকায়। শুকনো মৌসুমে সেঁচের পানিটুকু মেলে না! এখন আর নদীতে তেমন মাছও নেই। নদীর শীর্ণদেহের দুপারে গজিয়ে উঠা চরগুলো থেকে আওয়ামী লীগের পাণ্ডারা দিনের আলোতে মাটি ডাকাতি করছে। বছরের পর বছর ধরে নদীর বাঁধ ঘেঁষে বিশ থেকে পচিশ ফুট গভীরতায় মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়ছে বাঁধ। গতিপথ বদলে যাচ্ছে নদীর। শতশত মাটির ট্রাক যাতায়াতে বাঁধ আরো দূর্বল হচ্ছে। তার উপর বাঁধ ধরে রাখা শেওলাধরা হাজারো প্রকাণ্ড গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বহুদিন হলো।

    স্থানীয়রা বলছেন, মাটি কাটা নিয়ে অভিযোগ করলেও প্রশাসন কিছু বলে না। উল্টো তারা ডাকাতদের পাহাড়া দেয়। অভিযোগকারীর উপর হামলা চালায় সঙ্গবদ্ধ রাজনৈতিক ডাকাত দল। স্থানীয় সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী, সুধীজনদের সঙ্গে এসব নিয়ে বারবার কথা বলেও কোন লাভ হয়নি। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, লিখে, প্রতিবাদ করে কোন কাজ হয় না।

    এরই মধ্যে বাড়তি পানি ধারন করতে না পেরে ২২ আগস্ট রাতে গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গেছে। তারও আগে গোমতীর উপর অন্যায়ভাবে দেয়া ত্রিপুরার ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত ।

    গোমতীর জলে লাখো জীবন প্লাবিত হচ্ছে। মানুষ মরছে। গেরস্তের গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি মরছে। কৃষকের সন্তানতুল্য পাকা ধান ডুবে গেছে। গেরস্তের জীবনে যেন কেয়ামত নেমে এসেছে।

    স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই দুর্যোগের জন্য ভারতকে দোষারোপ করছি। বারবার বলছি ভারত কেন আগে থেকে না জানিয়ে বাঁধ খুলে দিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে ভারত বিরোধীতা করলেই বাহবা মিলছে। অপরদিকে লেখা বা আলোচনায় কোনভাবে ভারতকে গালি না দিলেই শুনতে হচ্ছে ‘আওয়ামী লীগার, দালাল’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

    কিন্তু আমরা এই প্রশ্ন তুলছি না, আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করে উজানের দেশ ভারত কেন যৌথ নদীতে বাঁধ দেবে!

    কেন আমরা শুস্ক মৌসুমে শুকিয়ে মরবো আর বর্ষায় ডুবে মরবো।

    আমাদের রাষ্ট্র কেন এসব বিষয়ের মিমাংসা করবে না?

    এই প্রশ্ন তুলছি না,

    ভারত আমাদের জানিয়ে বাঁধ খোললেও এই পানির চাপ আমাদের নদীগুলোকে বইতে হতো। আমরা কি আমাদের নদীগুলোকে সেভাবে সক্ষম করে তুলেছি,?

    আমরা বোঝতে চাইছি না, দখলে শীর্ণ হয়ে যাওয়া, চর জেগে উঠা নদী ভরা বর্ষায় জলের প্রবল স্রোত বইতে পারে না। বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক পাণ্ডাদের
    মাটি লুট নদীর বাঁধকে দুর্বল করলে ফেঁপে উঠা পানির তোড় সেই বাঁধ সইতে পারে না। বাঁধ ভেঙ্গে যায়। মানুষ মরে, গেরস্তের কপাল পোড়ে।

    আমিতো বরং প্রশ্ন করতে চাই, আমরা কেন ভারতের কাছে এতো প্রত্যাশা করছি! আমার আপনার ভাষায় ভারততো শত্রু রাষ্ট্র। শত্রু রাষ্ট্রের হাতে পানি নামক একটি মরনাস্ত্র আছে। সে যে কোন সময় সেই মরনাস্ত্র ছুঁড়বে।

    তাহলে সেই অস্ত্র মোকাবিলায় আমার রাষ্ট্রের সক্ষমতা কোথায়? আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর করেছে কি?
    বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র কি করেছে?

    আমরা আগেও যেমন এসব বাঁধ নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের পথে হাটিনি। আমরা জনগন এই অঞ্চলে আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের রাজনীতি গড়ে তুলেনি৷ নদীগুলো খনন করিনি, উল্টো রাজনৈতিক ও ও প্রশাসনিক মদদে দখল হতে দিয়েছি। লুট হতে দিয়েছি।

    এখনও সেভাবে আমাদের সক্ষমতা তৈরির আলাপকে এড়িয়ে যাচ্ছি। পানির ন্যায্যা হিস্যা আদায়ের আলাপকে এড়িয়ে যাচ্ছি। ভারতকে দায় দিয়ে দায়মুক্তি দিচ্ছি দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও সাবেক-বর্তমান সরকারকে।

    আমরা যদি এখনও সঠিক প্রশ্নটি করতে না জানি, প্রয়োজনীয় আওয়াজটুকু তুলতে না পারি, নদী মাতৃক এই বাংলাদেশের নদীগুলোকে সুরক্ষায় জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে না পারি তবে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।

    পিণ্ডির জিঞ্জির ছিন্ন করেও দিল্লির গোলামি করতে হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে।

    এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
  • Design & Developed by: BD IT HOST