পারভেজ সরকার,দেবিদ্বার//
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধানের চারা রোপণে খরচ কম, ফলন অধিক, কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে ২০২৪/২৫ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বোরো ধানের ‘সমলয়ে চাষাবাদ’ প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আধুনিক রাইস ট্রান্সপ্লান্ট মেশিনে মৌসুমে বোরো ধানের চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করেছে দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। সেই লক্ষ্যে বোরো ধানের চারা রোপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বছর উপজেলার রসূলপুর ও ইউছুফপুর ইউনিয়ন ব্লকে এ প্রণোদনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ বছর ১৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে রোপণ কার্যক্রম চলমান। কৃষকদের চাহিদার ও উচ্চ ফলনশীল ভিত্তিতে জাত হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে ব্রি ধান১০২ জাতটি।
মাঠ ঘুরে দেখা গেল, দুইটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে অনবরত রোপন হচ্ছে ধানের জমি। এক বিঘা জমি রোপন করতে সময় লাগছে গড়ে মাত্র ত্রিশ মিনিট। সুবিশাল মাঠের নিজ নিজ জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক কৃষাণীরা। একটা জমি শেষ করে চালক প্রস্তুত থাকা অন্য জমিতে মেশিন নিয়ে গিয়ে রোপন করে চলেছেন ৩০ দিন বয়সের বোরো ধানের চারা।
স্থানীয় কৃষক এমদাদুল হক জানান, প্রতি বিঘা জমি রোপণ করতে শ্রমিক খরচ হত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আর সিডলিং ট্রেতে চারা তৈরি করে রাইসট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে রোপণ করলে বিঘা প্রতি এক হাজার টাকা খরচ হবে। তার থেকেও বড় কথা প্রয়োজনের সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে শ্রমিক মজুরি দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। এ সব দুশ্চিন্তা থেকে এবার আমার মুক্ত।
ইউছুফপুর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, চারা রোপনের পর কৃষক জমি দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। হাতে লাগানো জামির তুলনায় মেশিনে লাগানো জমিতে ধানের চারা সুন্দর দেখা যায় না। তবে কৃষকদের আগে থেকে বলে দেয়া আছে, কুশি দেয়া শুরু হলে ১৫ থেকে ২০ দিন পর মেশিনে লাগানো জমি হাতে লাগানো জমির তুলনায় বেশি কুশি দিবে। ব্রি ধান১০২ জাতটির বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, গত বছর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক একরের একটি ব্রি ধান১০২ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করি। জমির ফলন দেখে এ বছর কৃষকেরা নিজেরাই ব্রি ধান১০২ চাষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্রি ধান১০২ জাতটি জিংক সমৃদ্ধ; যাতে জিংক এর পরিমাণ ২৫.৫ মি. গ্রাম/কেজি। তাছাড়া, জাতটির অ্যামাইলোজ ২৮% ও প্রোটিনের পরিমাণ ৭.৫%। ফলে এ ধানের চাল চিকন ও সাদা হওয়ার পাশাপাশি ভাত ঝরঝরে হবে। বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ থেকে ২৬ ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান১০২ জাতটি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সমলয় চাষাবাদের ব্লক প্রদর্শনীটি বাস্তবায়ন করছি। প্রথমত, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ; বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের ব্যবহারকে জনপ্রিয়করণ। দ্বিতীয়ত, বোরো ধানের নতুন জাত হিসাবে ব্রি ধান১০২ সম্প্রসারণ। তাছাড়া, রোপনের পর এ ডব্লিউ ডি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষকদের অভ্যস্ত করতে কার্যক্রম চলমান থাকবে।