মো:ফারুক আহমেদ টাঙ্গাইল (প্রতিনিধি:)
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার একটিবেসরকারি ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের পর ভুল চিকিৎসায় এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চিকিৎসকের দায়িত্বহীনতা, লাশ ফেলে রেখে পালানো এবং টাকার বিনিময়ে মামলা মেটানোর চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার(২৯ অক্টোবর) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামের জামাল ভূইয়ার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে সিটি হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর দুইটার দিকে সিজার অপারেশনের জন্য তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এনামুল হক সোহেল এই অপারেশন করেন, যিনি একই সঙ্গে এই ক্লিনিকের একজন পার্টনার বলে জানা গেছে। অপারেশন শেষে মাসুমা আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে অন্য কোনো হাসপাতালে স্থানান্তর না করে ক্লিনিকেই রাখা হয়। শেষমেশ অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, মাসুমার মৃত্যুর পর প্রায় তার লাশ অপারেশন থিয়েটারেই ফেলে রাখা হয় এবং কাউকেই ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ অন্যত্র রেফার করার প্রহসন চালানো হয়। এ খবর ছড়িয়েপড়তেই ক্লিনিক প্রাঙ্গণে উত্তাল হয়ে ওঠেন স্বজন ও স্থানীয়রা। কান্না-আহাজারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এদিকে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এ সময় ক্লিনিকের দুই সদস্যকে ভূঞাপুর থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়। মামলা মেটানোর চেষ্টা ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ
ওই দিন রাতেই থানায় উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে একটি মীমাংসার আয়োজন করা হয় বলে জানা যায়, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চান। এ সময় ক্লিনিক পক্ষের পাশাপাশি কিছু তথাকথিত সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুঞ্জন রয়েছে, পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। এ বিষয়েভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, নিহতের পরিবারকে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে কিন্তু মৃত ব্যক্তির অভিভাবক বা পক্ষ থেকে মীমাংসা ও মামলা না করার কথা জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন মহোদয়সহ সবাই মীমাংসা করে দিয়েছেন এবং পাঁচ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে- এমন বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। সিটি হার্ট ক্লিনিকের মালিকপক্ষের খায়রুল ভূঞার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি খুব অসুস্থ অবস্থায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাকে কথা বলা নিষেধ করা হয়েছে। তিনি শুধু এতটুকু জানান যে, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, “তিনি একটি হাসপাতালের মালিক হয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেলেন কেন? তার হাসপাতালেই তো চিকিৎসা নেওয়ার কথা।” এ ঘটনার পর থেকেক্লিনিকের দরজায় এখন তালা ঝুলছে। যোগাযোগের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো সদস্যকেই পাওয়া যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালের ২৫ মে তারিখে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ‘মা ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে’ ডা. এনামুল হক সোহেল ও অ্যানেস্থিসিয়ার চিকিৎসক ডা. আল মামুন অস্ত্রোপচার শুরু করেন। পরে এক পর্যায়ে রোগী অপারেশন টেবিলেই মারা যায়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বজনদের না জানিয়ে রোগীর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দেয়ার সময় স্বজন ও স্থানীয়রা বাধা দেন। ওই ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গঠিত তদন্ত কমিটি ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে এ পদক্ষেপ নেয়।
মাসুমা আক্তারের মৃত্যু এবং এর পরবর্তী অস্বচ্ছ ও নৈতিকতাবিহীন ঘটনাপ্রবাহ এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।


